চিত্রা, মধুমতি ও নবগঙ্গা বিধৌত নড়াইল জেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। জেলাটির পশ্চিমে যশোর, উত্তরে মাগুরা, পূর্বে ফরিদপুর ও গোপলগঞ্জ, দক্ষিণে বাগেরহাট এবং খুলনা জেলা অবস্থিত। নড়াইল একটি প্রাচীন জনপদ। নড়াইল শহরের সন্নিকটে কালিশংকর রায় এবং তার উত্তরসূরীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ০২টি বৃহৎ জমিদারী ছিল। ঐতিহ্যগত এবং ভৌগোলিক কারণে যুগে যুগে এ জনপদে বহু জ্ঞানী গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক ও সুরকারের জন্ম হয়েছে। যাদের অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত। এদের মধ্যে সাহিত্যিক নিহার রঞ্জনগুপ্ত, নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর, সেতার বাদক রবি শংকর, সুরকার বিজয় সরকার ও কমল দাসগুপ্ত, জারী শিল্পী মোসলেম উদ্দিন, অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী নওশের আলী এবং বিশ্ব বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে করেছে আলোকিত। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে নড়াইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় অধিকতর জনসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য জেলায় এ ওয়েব সাইটটি চালু করা হয়েছে।
নড়াইল ভৌগোলিক দিক থেকে ছোট জেলা হলেও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র বেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি খেলায় নড়াইলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃতি খেলোয়াড়েরা অংশগ্রহণ করে জেলার এবং দেশের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি করছে। জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৬১ সালে নড়াইল মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৫৭ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল এবং এর সূত্র ধরে ১৮৮৬ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টির কারণে এ অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যপক সম্প্রসারণ ঘটেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান স্বর্ণাক্ষারে লেখা থাকবে। নড়াইল জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযুদ্ধ অধ্যুষিত জেলা। এ জেলা হতে প্রায় ২০০০ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের ০৭জন বীরশ্রেষ্ঠের একজন মরহুম ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম নড়াইল জেলায়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ জেলায় আলবদর ও রাজাকারদের হাতে শাহাদৎ বরণকারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। জনশ্রুতি রয়েছে প্রায় ২৮০০ লোককে চিত্র নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটের পল্টুনের উপর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারগুলো এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলেছে। পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের দোসরদের হাতে বহু মা বোন লাঞ্চিত হয়েছে। এ সমস্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ও লাঞ্চিত মা বোনদের প্রতি আমাদের সকলের স্বশ্রদ্ধ সালাম ও সহানুভূতি অবারিত। ঐতিহ্যগতভাবে এ জেলার মানুষ সংগ্রামী। বৃটিশ আমলে নড়াইলে ১০০টি কুঠিতে নীল চাষ হতো। নড়াইল জেলার কৃষকরাই নীল বিদ্রোহের সূত্রপাত করেছিল এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ জেলার মানুষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
নড়াইল জেলায় বসবাসকারী জনগনের এক তৃতীয়াংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠির জনগনের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ জেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈদ, পূজা-পার্বন ও বড়দিনের অনুষ্ঠানে সকল সম্প্রদায়ের জনগন স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করে যা বৃহত্তর সমাজে শান্তি-শৃংখলা, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ জেলার সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দল মত নির্বিশেষে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জেলায় শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বিদ্যমান রয়েছে।
জেলা প্রশাসক
নড়াইল
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস